পাঠ্যবইয়ে যেভাবে উঠে এলো শেখ হাসিনার পতন

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে চালু করা শিক্ষাক্রম বাতিল করে ২০১২ সালের কারিকুলাম পুনঃপ্রবর্তন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে জুলাই আন্দোলনের নানা ঘটনা, ছবি, কার্টুন ও অন্যান্য বিষয়।

নতুন কারিকুলামের পাঠ্যবইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি পরদিন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আরও একবার সেই ঘোষণাপত্র ইথার তরঙ্গে ভেসে এসেছিলো মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময় গণভবন ছেড়ে ভারতে পালানোর ঘটনাও নতুন পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে। শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ১লা জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে এসব বই তুলে দেয়া হয়।

পাঠ্যবইয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে এভাবে

‘সেদিন ৫ আগস্ট ২০২৪ ৩৬শে জুলাই। বাংলাদেশের ক্যালেন্ডার জুলাইতে থেমে গেছে। শুধু দেশ নয় সারা দুনিয়ার মানুষ তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের দিকে। আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা এক দফা দাবি পেশ করেছে। সারা দেশ থেকে মানুষ ঢাকায় ছুটছে। ঘেরাও করবে গণভবন। মূলোৎপাটন করবে শাসনক্ষমতা আঁকড়ে থাকা ফ্যাসিবাদী শাসককে। কারফিউ উপেক্ষা করে ঢাকার উত্তরার পথে মানুষের দেখা মিলল। যাত্রাবাড়ীর দিকে মানুষ জড়ো হতে থাকল ধীরে ধীরে। নামল মানুষের ঢল। জনতা গণভবনে পৌঁছে যায় দুপুর নাগাদ। পতন অত্যাসন্ন টের পেয়ে স্বৈরাচার সরকারপ্রধান পালিয়ে যান দেশ ছেড়ে।’

বইয়ের সেই অধ্যায়টিতে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের শুরুতে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সরকার। উঠে আসে হাসিনা সরকার উৎখাতে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ- মাদরাসা শিক্ষার্থীদের অবদানের কথাও।

সেখানে উল্লেখ করা হয়, সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর আন্দোলন কর্মসূচি গতি হারাতে পারতো। কিন্তু বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাশিক্ষার্থীরা তখন ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসেন।

‘আমাদের নতুন গৌরবগাঁথা’ নামের অধ্যায়টিতে উঠে এসেছে আওয়ামী লীগের আমলের দীর্ঘ দুঃশাসনের কথাও। সামান্য দাবির কারণে নির্বিচারের নির্যাতন আর গুম-খুন করা হয়েছে- বলে উল্লেখ করা হয়েছে এতে। যুক্ত করা হয়েছে বছরের পর বছর ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুট হওয়ার কথাও।

আরও বলা হয়েছে, সাবেক সরকারের দানবীয় শাসন চালানোর জন্য প্রধান অবলম্বন ছিল মুক্তিযুদ্ধের গল্প। কিন্তু লোকে দেখল, হাজার সার্টিফিকেটধারী মুক্তিযোদ্ধার জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পরে। জাল সনদ সংগ্রহ করে চাকরির সুবিধা নিয়েছে অনেকে। সরকার সব অনিয়ম-অবৈধতাকে ঢেকে দিতে চেয়েছে অবকাঠামোগত ‘উন্নয়নের গল্প’ দিয়ে।

উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এখন পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি।

/এমএইচআর

  • Related Posts

    দুস্থ ও অসহায় মানুষের ভরসা যেন ঝর্ণা মান্নান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট

    নিজস্ব প্রতিবেদন দুস্থ ও অসহায় মানুষের ভরসা যেন ঝর্ণা মান্নান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট মান্নান ঝর্ণা ট্রাস্ট গরিব, দুঃখী ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। এই ট্রাস্ট…

    সরকারি হাসপাতালগুলোর ড্রাইভারদের ডোপ টেস্ট চালুর নির্দেশ

    তিন মাসের মধ্যে সকল জেলা হাসপাতালের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন এলাকার সব সরকারি হাসপাতালের ড্রাইভারদের ডোপ টেস্ট চালুর নির্দেশনা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। শনিবার…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *