 
									গাজীপুরের চান্দীনা চৌরাস্তায় কুপিয়ে ও জবাই করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮)। প্রকাশ্যে হত্যার পর এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা গেলেও পুলিশ জানিয়েছে তারা ফুটেজ দেখে আসামিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে।
আজ শুক্রবার দুপুরে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের সামনে ফুলবাড়িয়া প্রেসক্লাবের উদ্যোগে মানববন্ধন করে সাংবাদিকরা দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। মানববন্ধনে ফুলবাড়িয়া ছাড়াও জেলার প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা অংশ নেন। মানববন্ধনে সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, হত্যাকণ্ডের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দেখা গেলেও এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। অথচ পুলিশ বলছে তারা সিসিটিভির ফুটেজ দেখছে, কেমন দেখা কেমন দেশ। দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার না করলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
তুহিনের বাবা হাসান জামাল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,‘আমার বাবারে কই থুইয়া আইছ? ৯০ বছর বয়সে আর কত পরীক্ষা? আল্লাহ গো আল্লাহ, আমারে লইয়া যাইতা গা, কয়দিন আগে বড় ছেলেটা ক্যান্সারে মারা গেল। এখন আমার সবচেয়ে প্রিয় ছেলেকে কেড়ে নিল। ঘটনার দিনও সকালে ফোনে কথা হলো, জিজ্ঞেস করল, ঔষধ কিনেছি কি না। তার আগের দিন বিকাশে ১ হাজার টাকা পাঠিয়েছে। আমি সন্তান হত্যার সর্বোচ্চ বিচার চাই।’
মা সাবিহা খাতুন (৭৫) কাঁদতে কাঁদতে বলেন,‘আমার বাবারে চোখের অপারেশনের জন্য ঢাকায় নেওয়ার কথা ছিল। আমার বাবার কী অপরাধ ছিল? কেন তাকে মেরে ফেলল?তোমরা আমার বাবা তুহিনরে কই থুইয়া আইছ? আমার বাবার কী অপরাধ ছিল? কিভাবে মারছে তোমরা দেখছো?’
বড় বোন সাইদা আক্তার রত্না বলেন,‘আমার ভাই কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না, খারাপ সঙ্গেও ছিল না। তার দুটি ছোট ছেলে রয়েছে—তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে?’
পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তুহিন ছিলেন সবার ছোট। তিনি ২০০৫ সালে এসএসসি, ২০০৭ সালে এইচএসসি পাস করে গাজীপুরের ভাওয়াল কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেন। ২০১২ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন। স্ত্রী স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে চাকরি করেন। দুই ছেলে—তৌকির (৭) ও ফাহিম (৩)—কে রেখে গেছেন তিনি।
অকাল প্রয়াত এই সাংবাদিকের মৃত্যুতে পুরো ফুলবাড়িয়ায় গভীর শোক নেমে এসেছে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায় গাজীপুর ঈদগাঁ মাঠে জুমার নামাজের পর সাংবাদিক তুহিনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বাদ মাগরিব নিজ বাড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়িয়া ভাটিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।






