
প্রায় তিন বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। এতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। চাল, ডাল, তেল, ময়দা থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ভারসাম্য হারিয়ে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো ঋণ এবং সঞ্চয় ভেঙে খরচ চালাচ্ছে। গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না এলে দারিদ্র্যের হার আরও বাড়বে।
গত জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। জুন মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দরিদ্র মানুষের জন্য চালু থাকা কর্মসূচিগুলো দ্রুত সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছাতে হবে। একই সঙ্গে এক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে কঠোর হতে হবে। দ্রুত মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার পাশাপাশি দারিদ্র্য নিরসনে টার্গেট করে কর্মসূচি চালুর পরামর্শও দেন তারা।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক গবেষণায় উঠে এcnছে- গত তিন বছরে দারিদ্র্য ১৮ দশমকি ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৭ দশমকি ৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালের অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানুষের জীবনযাত্রার খরচ অনেক বেড়েছে। খাবার, চিকিৎসা, বাসাভাড়া ও শিক্ষাÑ এমন প্রতিটি খাতেই ব্যয় বেড়েছে। ফলে দরিদ্র থেকে মধ্যবিত্ত পর্যন্ত সবাই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখতে পারছে না। বিশ্বব্যাংক মনে করে, অতিদারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার প্রকৃত কারণÑ আয় কমে যাচ্ছে, দুর্বল শ্রমবাজার ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ে মন্থর গতি। বিশ্বব্যাংক বছরের শুরুতেই আভাস দিয়েছেÑ খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে ২০২৫ সালে আরও ৩০ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র হয়ে যেতে পারে।
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান এমএ রাজ্জাক বলেন, গত তিন-চার বছরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের আয় কমেছে। ফলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। দারিদ্র্য যে হারে বেড়েছে, মানুষের প্রকৃত মজুরি সে হারে বাড়েনি। ফলে দরিদ্র হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ভুল নীতি, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অতিরিক্ত টাকা সরবরাহের কারণেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এখন সরকারকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।