১৬২ কোটি টাকা ফেরত চায় জীবন বীমা করপোরেশন

অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের মূল্য দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমা করপোরেশন (জেবিসি)। গ্রাহকের বীমা প্রিমিয়ামের টাকা দুর্বল পদ্মা ব্যাংকে আমানত রেখে মেয়াদ শেষেও তা আর ফেরত পাচ্ছে না। মেয়াদোত্তীর্ণ হিসাবের অর্থ ফেরত চেয়ে করপোরেশনটি পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে ৪১টি চিঠি এবং পাঁচটি ডিও লেটার লিখেও সাড়া পাচ্ছে না। এ জন্য পদ্মা ব্যাংকের এমডির সাথে তৎকালীন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পাঁচটি সভা করেছেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৫ মে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ২০২৩ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য টাকা পরিশোধসহ পেমেন্ট শিডিউল দাখিল করার অনুরোধ করলেও ব্যাংক এখন পর্যন্ত কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি। চাহিদা পেমেন্ট শিডিউলও দাখিল করেনি। ফলে ২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে পদ্মা ব্যাংকে সাতটি মেয়াদোত্তীর্ণ এফডিআরের সুদ-আসলে পাওনা দাঁড়িয়েছে ১৬২ কোটি টাকা, যা গত সাত বছরে চেষ্টা করেও তুলতে পারেনি জীবন বীমা করপোরেশন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে নাম পরিবর্তন করে ফারমার্স ব্যাংক থেকে ‘পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড’ নামে যাত্রা শুরু করার এতদিন পরও পাওনা পরিশোধ করতে পারেনি বেসরকারি খাতের ব্যাংকটি। অর্থ উদ্ধারে সহযোগিতা চেয়ে সর্বশেষ গত ২৫ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে আবার চিঠি দিয়েছে করপোরেশন। চিঠিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে করপোরেশনের সমুদয় পাওনা পরিশোধের অনুরোধ করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে- ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পদ্মা ব্যাংকের তিন শাখায় সাতটি মেয়াদি আমানতের মাধ্যমে মোট ১০১ কোটি ৫২ লাখ ২৬ হাজার টাকা রাখা হয়। এসব আমানত মেয়াদোত্তীর্ণের পরও নগদায়ন করতে পরেনি শাখাগুলো। বারবার তাগিদপত্র দেওয়ার পরও এসব অর্থ ফেরত দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকটি।

এরপর এ অর্থ উদ্ধারে সরকারের সহায়তা চেয়ে সর্বশেষ ২৫ আগস্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। আগস্ট শেষে সুদ-আসল মিলে ব্যাংকটির কাছে পাওনা দাঁড়িয়েছে ১৬২ কোটি ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯৫০ টাকা। এ অর্থ পরিশোধে বিভিন্ন সময়ে ৪১টি চিঠি দেওয়া হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ আমানতকারীদের কাছ থেকে খুব বেশি আমানত পায় না। ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের তহবিল সংগ্রহের দিকে এসব প্রতিষ্ঠানের ঝোঁক থাকে বেশি। অনেক সময় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের মোটা অঙ্কের আমানত পাওয়ার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ঘুষ হিসেবে কমিশন দেওয়া হয়। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা অনেক দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রেখে নির্ধারিত সময়ে তা ফেরত পায় না। জেবিসির আমানত রাখার ক্ষেত্রেও এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, তা জানা যায়নি।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, জোর করে ব্যাংক চালানো যায় না, যার উদাহরণ পদ্মা ব্যাংক। দেউলিয়া হওয়া ব্যাংকে টাকা ঢুকিয়ে আরও দায় বাড়িয়েছে সরকার।

  • Related Posts

    ‘চুপ থাকো, তোমার জন্য এসব হয়েছে’, আদালতে মতিউরকে স্ত্রী

    দুর্নীতির মামলায় ছাগলকাণ্ডের আলোচনায় আসা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান এবং তার স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লায়লা কানিজের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।…

    ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে: প্রধান উপদেষ্টা

    প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সেটি হবে জাতির নবজন্মের মহোৎসব। আজ রবিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *