ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনার লক্ষ্যে প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। প্রথম ধাপে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ, মোট ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। গত বছরের অক্টোবর মাসে ওই কমিশনগুলো কাজ শুরু করে। এরপর কমিশনগুলোর দেওয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রণয়নের লক্ষ্যে গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করে ওই কমিশন। এরপর কমিশন প্রস্তাবগুলো নিয়ে এ বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে। আলোচনার ভিত্তিতে মোট ৮৪টি প্রস্তাব (ভিন্নমতসহ) নিয়ে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করে ঐকমত্য কমিশন।
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সরকারের কাছে কমিশনগুলোর দেওয়া প্রস্তাবগুলোর মধ্য থেকে ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্বে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে পৃথক সংলাপ করে কমিশন।
আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম স্থগিত) ও জাতীয় পার্টিসহ ৩০টি নিবন্ধিত দল এই সংলাপে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়নি। দ্বিতীয় পর্বে ২০টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ২ জুন থেকে ৩০টি দল ও জোটের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে কমিশন, যা ৩১ জুলাই শেষ হয়। দুই পর্বের আলোচনায় ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে কমিশন ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ চূড়ান্ত করা হয়। এরপর সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে তৃতীয় দফায় সংলাপ শুরু এবং ৮ অক্টোবর তা শেষ করেছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি কমিশন। সরকার সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে কমিশন। গত ১৪ অক্টোবর সনদের চূড়ান্ত অনুলিপি রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠিয়েছে কমিশন। গতকাল সনদে স্বাক্ষর করেছে ২৪টি রাজনৈতিক দল।
এদিকে গণভোটের মাধ্যমে সাংবিধানিক সংস্কারে একমত হলেও সময় ও পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। এখন বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন মনে করে জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য কমিশনের মেয়াদকালে বাস্তবায়নের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা দেবে কমিশন। আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে কমিশন সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠাবে এবং সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে বলে কমিশন আশাবাদী।





