 
									বড় প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে নতুন অর্থবছরের যাত্রা শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এবিআর)। তবে রাজস্ব আহরণে জুলাই মাসে ২৪.৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। জুলাই মাসে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ১১১ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা; ঘাটতি ২ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এনবিআর। ইতোমধ্যে রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা সভা করেছে। এনবআিরের আয়কর, মূসক ও শুল্ক এই তিন বিভাগের কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। সেখানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান রাজস্ব আদায় বাড়াতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রতিটি কর অঞ্চলকে গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে কর ফাঁকি উদ্ঘাটন করারও নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, দেশে এখন ১ কোটি ১২ লাখের মতো টিআইএনধারী আছেন। তাদের মধ্যে ৪০ থেকে ৪২ লাখ টিআইএনধারী প্রতিবছর রিটার্ন দেন। বার্ষিক আয় সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি হলেই রিটার্ন দিয়ে কর দিতে হয়। দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নসমুহ আয়কর আইনের বিধান অনুসারে প্রসেসিং করার মাধ্যমে কর আদায় কার্যক্রম বেগবান করার পরামর্শ দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, টিআইএন থাকা সত্ত্বেও যেসব করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন না, তাদের সবাইকে রিটার্ন দাখিলেরনোটিশ পাঠিয়ে তাদের আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্য সরেজমিন তদন্ত করে, আইন অনুযায়ী আয়কর আরোপ করে তা আদায় করার কার্যক্রম নিয়ে প্রতি মাসের রাজস্ব সভায় তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কমিশনার আমাদের সময়কে বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বন্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে। ফলে রপ্তানিপণ্য উৎপাদনের জন্য বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানি করা পণ্য বা কাঁচামাল খোলা বাজারে বিক্রির প্রমাণ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এনবিআরের তথ্যমতে, অনেক প্রতিষ্ঠানই এসব পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেয়। এর বিরুদ্ধে বর্তমানে ‘বিআইএন লক’সহ (প্রতিষ্ঠানের ট্যাক্স আইডি স্থগিত করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ করা) ফৌজদারি মামলা করে এনবিআর।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান সভায় বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের সঙ্গে রাজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
জানা গেছে, এনবিআরের তিনটি অফিসের আওতায় বন্ড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। মূলত রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল ও অ্যাকসেসরিজ আমদানির সুবিধা দিতে বন্ড লাইসেন্স দেওয়া হয়। এর শর্ত হলো, আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে তৈরি পণ্য পুরোটাই রপ্তানি করতে হবে। স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হলে ওই কাঁচামালের ওপর প্রযোজ্য শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে হবে।
জানা গেছে, এ লাইসেন্সের বড় একটি অংশ পেয়েছে পোশাক ও অ্যাকসেসরিজ কারখানাগুলো। বস্ত্রকল মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের বিরুদ্ধে এই সুবিধা অপব্যবহারের অভিযোগ করে আসছেন। চার-পাঁচ বছর আগে এনবিআর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জে ফৌজদারি মামলা করে এবং অভিযান চালায়। কিন্তু পরে এই কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। এর ফলে বিপুল পরিমাণ বন্ড সুবিধার পণ্য অবৈধভাবে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন।
বৈঠকসূত্র জানায়, লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে রাজস্ব আহরণে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ভ্যাট আইনের কঠোর প্রয়োগের ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে। যারা মোটেও ভ্যাট পরিশোধ করেন না, তাদের ভ্যাটজালে আনা এবং যারা ভ্যাট ফাঁকি দেন, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে শাস্তির ব্যবস্থা করে ভ্যাট আদায় বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া কাস্টম হাউসগুলোতে নিলাম কার্যক্রম জোরদার করে কনটেইনার জট কমানো এবং যেসব কনটেইনার অনেক দিন ধরে বন্দরে পড়েছে, সেগুলো আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দ্রুত নিলামে বিক্রির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।







