তালায় ১৫ ভেন্টের স্লুইস গেটটি হুমকির মুখে
সংস্কারের অভাবে হুমকির মুখে পড়েছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরায় বেতনা নদী ও কপোতাক্ষ নদের মাঝে নির্মাণ করা ১৫ ভেন্টের স্লুইস গেটটি। স্লুইস গেটের উত্তরাংশে বেতনা নদী আর দক্ষিণাংশে কপোতাক্ষ নদ। কালের বিবর্তনে স্লুইস গেটটি জরাজীর্ণ হয়ে এক প্রকার হুমকির মুখে পড়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুত সংস্কার করা হবে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ স্লুইস গেটটির নিচে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। এতে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। যার কারণে তালা উজেলার নিম্ন অঞ্চলে প্রতি বছর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি সরকারের নজরে আনতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন-সংগ্রাম, সভা-সমাবেশ করেছেন এলাকাবাসী। পরবর্তীতে সরকার মোটা অংকের টাকা বরাদ্দ দিয়ে পলি অপসারণ করে। এতে পুনরায় পানি নিষ্কাশন হতে থাকে। তবে বহুদিনের পুরাতন ভেন্টগুলো প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে।
স্লুইসগেটটি বর্তমানে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। স্লুইস গেটটি সার্বিকভাবে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে বিনা বেতনে দেখাশুনা করে আসছে খেশরা এলাকার বিকাশ চন্দ্র সরকার নামে এক ব্যক্তি।
তিনি বলেন, আমার নাম করে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী কয়েকজন পানি তোলার কথা বলে মোটা অংকের টাকা তোলে। কিন্তু আমি কোন পারিশ্রমিক পাইনা। তবে যদি কারো পানি প্রয়োজন হয় তাহলে আমি তাদের পানি দেই। তিনি আরও জানান, ২৪ ঘণ্টা একটি ভেন্ট (ফোকর) খোলা থাকে। তবে বহুদিন সংস্কার না করায় গেটটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। গেটটির নিচে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। এতে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। যার কারণে তালা উপজেলার নিম্ন অঞ্চলে প্রতি বছর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
খেশরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন তাজ বলেন, সাবেক এমএলএ বীরমুক্তিযোদ্ধা স ম আলাউদ্দীন ও আমার বাবা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সম্পাদক সুজায়েত সরদার জেঠুয়া হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। তখন আলাউদ্দীন এলাকার নেতৃত্ব দিতেন। স ম আলাউদ্দীন ও আমার বাবার অক্লান্ত পরিশ্রমে এই স্লুইস গেটটি নির্মাণ হয়। সে সময় নদ-নদীতে বাঁধ ছিল না। তাই নদ-নদীর জোয়ার-ভাটার পানিতে কৃষকের ফসলের ক্ষেত দিনে দুইবার ডুবতো আর দুইবার জাগতো। কৃষকদের ফসল রক্ষায় স্লুইস গেটটি নির্মাণ করা হয়।
তিনি আরও জানান, এই গেটের ১৫টি ফোকর আছে। একটা ফোকর দিয়ে পানি সব সময় চলাচল করে থাকে। তাছাড়া কারো পানি প্রয়োজন হলে বা যখন ঘের শুকিয়ে যায় তখন দু’একটা ফোকর খুলে দেওয়া হয়। তবে গেটটি বেশ পুরানো হওয়ায় জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তিনি আরও জানান, সরকারিভাবে এই গেটটি কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে আর একটি প্রকল্প আসছে বলে তিনি জানান।
খেশরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রভাষক রাজিব হোসেন রাজু জানান, পাকিস্তান সরকারের সময় এই স্লুইস গেটটি নির্মিত হয়। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় স্লুইসগেটটি নষ্ট হবার উপক্রম হয়ে এক প্রকার হুমকির মুখে পড়ছে। গেটটি আছে বলে আমরা এখনো বেঁচে আছি নইলে জলাবদ্ধতায় আমাদের না খেয়ে মরতে হতো।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ সুধাংশু শেখর সরকার বলেন, স্লুইস গেটটি সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে ডিপিপিতে পাশ হয়েছে। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে এটি দ্রুত সংস্কার করা হবে।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহিদুল ইসলাম বলেন, স্লুইসগেটটি দ্রুত সংস্কার করে জনদুর্ভোগ লাঘব করা হবে।