ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে আব্দুল কাদের মির্জা এখানে ভোট ডাকাতি হলে ‘উনার’ ওপর বর্তাবে
নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী, দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আব্দুল কাদের মির্জা স্থানীয় প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন।
সোমবার বেলা ১১টায় বসুরহাট রূপালী চত্বরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিয়ে আয়োজিত নির্বাচনী সমাবেশে এই অভিযোগ তোলেন। এ সময় পরপর তিনবারের মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে নিজের জীবন দিতে প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেন।
সমাবেশে নিজের বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরের প্রসঙ্গ টেনে আব্দুল কাদের মির্জা মিশ্র আঞ্চলিক উচ্চারণে বলেন, ‘আমাদের মিনিস্টার সাব, উনি এই এলাকার সংসদ সদস্য। এখানে ভোট ডাকাতি হলে, মারামারি হলে, হানাহানি হলে উনার কিছু
দায়িত্ব আছে না? উনার ওপর এটা বর্তাইতো ন, এই ঝামিলার বোঝা উনার উপরে বর্তাইতো ন, হেই মিয়ার দুর্নাম অইতো ন। এ সময় সমাবেশে উপস্থিত জনতার হাঁ-সূচক মতামতের প্রেক্ষিতে মির্জা বলেন, তো উনার শুভাকাঙ্ক্ষি কেউ থাকলে উনালে বলি দেন ইয়ানে ফেয়ার ইলেকশনটা কইবারলাই নোয়াখালীর এই দুষ্টচক্ররে বলি দিবারলাই।’
সমাবেশের শুরুতে আব্দুল কাদের মির্জা বলেন, ‘আমি আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছিলাম। আমি যেকয়টা দিন বেঁচে থাকি, সাহস করে সত্য কথা বলব। অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসত্যের বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ করব। সেই প্রতিজ্ঞা নিয়েই আমি পৌরসভা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি (প্রার্থী হয়েছি)। আমার কাছে নির্বাচন বড় নয়, আমার প্রতিজ্ঞাটা বড়। আমি এখন এই নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে, আজকে অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি। এখন নির্বাচন নিয়ে, নির্বাচনে কালিমা লাগানোর জন্য, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র বিভিন্ন জায়গা থেকে হচ্ছে। মাইজদী থেকে হচ্ছে, ফেনী থেকে হচ্ছে।’
প্রশাসনের উষ্মা প্রকাশ করে আব্দুল কাদের মির্জা বলেন, ‘ডিসি সাহেব, এসপি সাহেব, নির্বাচন অফিসার উনারা কী করছে; বুঝি না। যুব মহিলা লীগের পরিচয় দিয়া আমারে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করল। মোবাইল ট্যাক করে তার নাম-ঠিকানা সব পাওয়া গেছে। আজকে তিনদিন কিছুই হয়নি। আমার বাড়িতে চারবার আক্রমণ হয়েছিল, কিছুই হয়নি। তাহলে আপনাদের অবস্থা কী? আপনাদের অবস্থা কী আমি বললেই আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা ক্ষেপে যায়। তাদের কষ্ট লাগে। এখন নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলব, যেই কেন্দ্রে কেউ ভোট ডাকাতি করবে, সেই কেন্দ্র সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হবে। প্রয়োজনে ১০ বার ভোট হবে। কিন্তু নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করা চলবে না।’
এ সময় নিজের প্রসঙ্গ টেনে আব্দুল কাদের মির্জা বলেন ‘আলস্নাহকে হাজির-নাজির জেনে বলছি, যদি নির্বাচনের দিন আপনারা দেখেন আমি অনিয়মের নির্বাচন করছি, আলস্নাহর কাছে প্রার্থনা করে বলছি; হে খোদা, আমি যদি অনিয়মের ভোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হই, তুমি সেদিনই আমাকে মৃতু্য দেবে’।
এ সময় তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তারা কারও ঘরের সঙ্গে, খড়ের গাদার সঙ্গে, যেখানে বিএনপি বেশি, সেখানে বিএনপির ঘরে, যেখানে জামায়াত বেশি, সেখানে জামায়াতের ঘরে, যেখানে আওয়ামী লীগ বেশি সেখানে আওয়ামী লীগের ঘরে আগুন দেবে। লাগিয়ে একটি উত্তেজনা সৃষ্টি করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে তারা।’
প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে আব্দুল কাদের মির্জা বলেন, ‘কোম্পানীগঞ্জে যদি একটা মায়ের বুক খালি হয়, বসুরহাট পৌরসভা নিয়ে যদি কোনো প্রহসন করা হয়, যদি একটা জাল ভোট কোথাও পড়ে, কারও ঘরে আগুন লাগে এটার দায় নোয়াখালীর ডিসি, এসপি, নির্বাচন অফিসারকে নিতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে আপনাদেরই দায় নিতে হবে। সোজা কথা। আমি আমার রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে হলেও ১৬ তারিখের নির্বাচন নিরপেক্ষ করব।’
এরপর তিনি বলেন, ‘এক ভোট পেলেও প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়ে আমার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাব। আবার দলের কর্মকান্ড শুরু করব। আবার আপনাদের সঙ্গেই থাকব। আমি আর কোথায় যাব। আমিতো আপনাদের সঙ্গেই ছিলাম।’
বিএনপি ও জামায়াতের দুই প্রার্থীর নাম উলেস্নখ করে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী মির্জা বলেন, ‘যদি কোথাও কারচুপি হয়, আমাকে জানাবেন। আমিসহ একসঙ্গে বর্জন করব। আমি আজ নির্বাচন অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছি, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তারা যদি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়ায় তাহলে এই কোম্পানীগঞ্জ থেকে তাদের বিদায় নিতে হবে। কোনো অনিয়ম বরদাশত করা হবে না।’
এ সময় নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেনকেও সর্তক করে আব্দুল কাদের মির্জা বলেন, ‘আজ একজন আছেন শাহাদাত সাবে- নির্বাচন কমিশনার। অত্যন্ত ভালো মানুষ। উনি আশার কথা ছিল আগামী দিন। অদৃশ্য কারণে আসছেন না। আজকে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি বলেছেন, ফেয়ার নির্বাচনের জন্য সব ব্যবস্থা করবেন। যদি না করেন, উনি এই এলাকার সন্তান হিসেবে, নির্বাচন কমিশনার হিসেবে উনার দায়িত্ব এড়াবার কোনো সুযোগ আছেনি? আমাদের মিনিস্টার সাবের যেমন নাই, উনারও নাই। উনার এলাকায় গন্ডগোল হইলে সারাদেশে কইবো শাহাদাত সাবের এলাকায় গন্ডগোল হইছে, ওবায়দুল কাদের সাবের এলাকায় গন্ডগোল হইছে-ভোট চুরি। কইবো না?’
প্রশাসনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রশাসনের লোকজন মনে করে, শেখ হাসিনাকে তারা ক্ষমতায় এনেছে। দুর্নীতিবাজ নেতাদের বিচার হচ্ছে, দুর্নীতিবাজ প্রশাসনের বিচার দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দলীয় নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ফেনীতে একজন উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে গুলি করে পেট্রল ঢেলে নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু আজও বিচার হয়নি। নোয়াখালীতে নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজি চলছে