হামলার পেছনে কারা?
ওয়াশিংটনে ১০০ কনস্টিটিউশন অ্যাভিনিউ ঠিকানায় ক্যাপিটল হিল যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের অধিবেশনের স্থান। এর দুধসাদা গম্বুজ আমেরিকার গণতন্ত্রের প্রতীক। ক্যাপিটল পাহাড় থেকেই এই স্থাপত্যের নামকরণ। তবে অষ্টাদশ শতকের প্রথমে এই পাহাড়ের নাম ছিল ‘জেনকিন্স’। পরে নাম পরিবর্তিত হয়।
১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে এর মাথায় তৈরি হতে শুরু করে আজকের ক্যাপিটল হিল। আমেরিকার গণতন্ত্রের প্রতীকেই এবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর আগেও ক্যাপিটল হিলে হামলা হয়েছে। তবে এবারের সঙ্গে অন্যগুলোর পার্থক্য অনেক। কারণ অন্যগুলোতে বিদেশি শক্তি বা দেশের একটা গ্রুপ বা ব্যক্তি হামলা চালিয়েছে। এবার হামলার জন্য স্বয়ং প্রেসিডেন্টকে দায়ী করছেন অধিকাংশ মার্কিনী। কিন্তু হামলার পেছনে কারা তা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য এসেছে।
নারকীয় হামলার পেছনে কে?
গত বুধবারের হামলা আমেরিকার গণতন্ত্রের কালো দিনগুলোর তালিকায় আরেকটি দিন যুক্ত করেছে। হামলার ভিডিও এবং ছবি দেখে এখনো বিশ্বের অনেকে বিস্মিত হচ্ছেন। কারণ যে আমেরিকা সারা বিশ্বে গণতন্ত্রের কথা বলে সেই দেশের গণতন্ত্রের প্রতীকেই না কি হানা হলো? পুরো বিশ্ব এর নিন্দায় মুখর হয়েছে। হামলায় সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ পাঁচ জন নিহত হলেও হামলার প্রকৃত কারণ এখনো জানতে পারেনি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তবে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের পরিচয় দিয়ে ব্রিটেনের প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা লিখেছে, এরা চরমপন্থি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হামলার আগে তাদের পোস্ট বিবেচনা করে এমন তথ্যই উল্লেখ করা হয়েছে। এদের বেশির ভাগই শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী। ‘ট্রাম্প না যুদ্ধ, বেছে নিন। বন্দুক চালাতে জানেন না। এখনই শিখে নিন। সরকারি ভবনে তাণ্ডব চালাব। পুলিশ মারব, নিরাপত্তাকর্মীদের মারব, সরকারি কর্মীদের মারব। যতক্ষণ না ব্যালট পুনর্গননা হচ্ছে।’ এই অভিযানকে ‘বিপ্লব’ বলেও সম্বোধন করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এলিজাবেথ নামের এক ট্রাম্পভক্ত। যুক্তরাষ্ট্রে যে চরমপন্থার আবির্ভাব ঘটেছে তা গণতন্ত্রের ওপর এই হামলা থেকেই বোঝা যাচ্ছে।
এবিসি নিউজ জানায়, হামলার পেছনে দায়ী মূলত ট্রাম্পভক্তরা। এমনকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার সহযোগীদেরও এর পেছনে হাত থাকতে পারে। কংগ্রেস ভবনে তাণ্ডবের আগে ট্রাম্প ও তার পরিবারের লোকজন একটি পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন। সেই পার্টির ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার মেয়ে ইভাঙ্কা, ছেলে জুনিয়র ট্রাম্পসহ ট্রাম্প ঘনিষ্ট আরও অনেকেই ছিলেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি রেকর্ড করেছেন জুনিয়র ট্রাম্প। সেখানে পপ গানের সঙ্গে সবাইকে নাচতে দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি ভিডিওতে লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করার কথা বলতে শোনা যাচ্ছে ট্রাম্পে ছেলেকে। সমর্থন করার কথাও বলতে শোনা যাচ্ছে তাদের মুখে।
কংগ্রেস ভবনে হামলার আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর কাছেই বিক্ষোভ-পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য দেন। তিনি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং ক্যাপিটল হিলে মার্চ করার আহ্বান জানান। সমাবেশে ট্রাম্পের ছেলে, চিফ অব স্টাফ মার্ক মিডোস এবং উপদেষ্টা ড্যান স্কাভিনো বিক্ষোভে মানুষের সংখ্যা হিসাব করছেন। ‘মার্চ টু সেভ আমেরিকা’ এবং স্টপ দ্য স্টিল নামে ফেসবুকে পেইজ খোলা হয়েছে। ‘মার্চ টু সেভ আমেরিকা’র পেইজে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং স্টপ দ্য স্টিল কোয়ালিশনের পাশে দাঁড়ান এবং প্রেসিডেন্ট পার্কে সকাল ৭টায় উপস্থিত থাকুন। আমাদের জাতির ভাগ্য এই দিনটির ওপরই নির্ভর করবে। দুপুর ১টায় আমরা ইলেকটোরাল কলেজ গণনা বন্ধে ক্যাপিটল হিলে যাবো। ‘স্টপ দ্য স্টিল’ পেইজেও বিক্ষোভের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে।
অনেকেই সন্দেহ করছেন ট্রাম্প সমর্থক মিলিশিয়া বাহিনী এই হামলার পেছনে আছেন। কিন্তু ওয়াশিংটন মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক দক্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাইক ব্রুকস জানান, হামলাকারীরা মিলিশিয়া নন। তিনি বর্তমানে দায়িত্বে থাকা অনেক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন যে, বিক্ষোভ মিলিশিয়া বাহিনী করেনি। তারা ডানপন্থী কিছু গ্রুপ।
পশ্চিমা গণতন্ত্র হুমকির মুখে!
জার্মানির প্রভাবশালী মিডিয়া ডয়চেভেলে জানিয়েছে, বার্লিনে পার্লামেন্ট ভবন এবং হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে পার্লামেন্ট ভবনও আক্রমণের শিকার হয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্রে র কংগ্রেস ভবনও আক্রমণের শিকার হলো। কেবল পার্লামেন্ট ভবনের হামলা নয়, অনেক নিদর্শনই বলে দিচ্ছে পশ্চিমা গণতন্ত্র হুমকির মুখে। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের তৎকালীন প্রধান ডেভিড রাঞ্চিম্যান ২০১৮ সালে প্রকাশিত ‘কীভাবে গণতন্ত্রের বিনাশ হবে’ শীর্ষক বইয়ে উল্লেখ করেছিলেন কীভাবে গণতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে। তার মতে, গণতন্ত্র মারা যাচ্ছে না। অনিশ্চিত মধ্যবয়সের সংকটে পড়েছে। রাজনীতিতে যেসব ভূমিকম্প হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া এবং যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট সংক্রান্ত গণভোট।