আর্জেন্টাইন রাউলের গোলে চ্যাম্পিয়ন কিংস
প্রথমবারের মতো ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠেছিল সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ করে শিরোপা ধরে রাখল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। টানা তৃতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলে পরপর দুইবার শিরোপা জিতল দলটি। রোববার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা নিজেদের ঘরেই রাখল অস্কার ব্রম্নজোনের শিষ্যরা।
বসুন্ধরার পক্ষে একমাত্র গোলটি করেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড রাউল অস্কার বেচেরা। এই মৌসুমে বসুন্ধরা কিংসের অন্যতম ভরসা আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার রাউল বেচেরা। ফেডারেশন কাপের প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ফাইনালে হয়ে থাকলেন জয়ের নায়ক!
ঘরোয়া ফুটবলের শীর্ষ লিগে ওঠার পর এটি বসুন্ধরা কিংসের চতুর্থ ট্রফি জয়। অভিষেক আসরে দলটি জিতেছিল প্রিমিয়ার লিগ ও স্বাধীনতা কাপ। গত মৌসুমে জিতেছিল ফেডারেশন কাপ। ট্রফি ধরে রাখার মাধ্যমে আরেকটি মৌসুম শুরু হলো কিংসের। ফাইনার খেলা শেষে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসদের হাতে ট্রফি তুলে দেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। এ সময় বাফুফের সহসভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী এবং পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক এফ এম ইকবাল বিন আনোয়ার ডন উপস্থিত ছিলেন।
মাহবুবুর রহমান সুফিল ও বিপলু আহমেদের জায়গায় বসুন্ধরা কিংসের শুরুর একাদশে ফিরেন মতিন মিয়া ও মোহাম্মদ ইব্রাহিম। সেমিফাইনালের একাদশ অপরিবর্তিত রেখে শুরু করে সাইফ স্পোর্টিং। শুরু থেকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ কিংসের সঙ্গে টক্কর দিয়েই লড়াই করে সাইফ। গোলশূন্য প্রথমার্ধে দুই দলই ছিল সমানে সমান। শুরু থেকেই চ্যাম্পিয়নদের মতো খেলতে থাকে কিংস। তবে সাইফও কম যায় না। প্রথম থেকেই শিরোপা নিজেদের করতে আক্রমণ শুরু করে। তবে প্রথমার্ধে গোলের দেখা পায়নি কোনো দলই। চতুর্থ মিনিটে কিংসের তপু বর্মণ জাল খুঁজে পেলেও অফসাইডের কারণে গোল হয়নি।
ষোড়শ মিনিটে সতীর্থের লং বল ধরে ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা বিশ্বনাথ ঘোষের শট ফিস্ট করে ফেরান সাইফ স্পোর্টিংয়ের গোলরক্ষক পাপ্পু হোসেন। একটু পর ডি-বক্সের ভেতর থেকে কিংসের বেচেরার শট বেরিয়ে যায় দূরের পোস্ট দিয়ে। ১৯তম মিনিটে সতীর্থের থ্রম্নস পাস অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে নিয়ন্ত্রণে নিলেও তালগোল পাকিয়ে শট নিতে পারেননি সাইফ স্পোর্টিংয়ের ইকেচুকু কেনেথ। নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ডের ব্যাকপাসে স্বদেশি জন ওকোলির জোরালো শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠা ম্যাচে পরের মিনিটেই আরেকটি ভালো সুযোগ পায় প্রথমবারের মতো কোনো প্রতিযোগিতার ফাইনালে ওঠা সাইফ স্পোর্টিং। বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢোকা ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের শট ছুটে এসে ফেরান আনিসুর রহমান জিকো।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ডি-বক্সের একটু বাইরে বিশ্বনাথ ঘোষের হাতে বল লাগলে ফ্রি কিক পায় সাইফ স্পোর্টিং। রহমত মিয়ার দারুণ বাঁকানো শট ফিরিয়ে কিংসের ত্রাতা জিকো। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রহমতের আচমকা দূরপালস্নার শট প্রথম দফায় লাফিয়ে ফিস্ট করার পর দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় গস্নাভসে নেন জিকো।
খেলার বিরতি থেকে ফিরে এসে বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি কিংসকে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল পেয়ে যায় বসন্ধুরা। ম্যাচের ৫১ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান রবসন সিলভার মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো বল ধরে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে কোনাকুনি শটে গোল করেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড রাউল অস্কার বেচেরা। এই একমাত্র গোলেই ফেডারেশন কাপ ফুটবলের শিরোপা ধরে রেখেছে বসুন্ধরা কিংস।
এবারই প্রথম ফাইনালে ওঠা সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের দুর্ভাগ্য যে তারা অন্তত তিনটি ভালো সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। ভাগ্য হয়তো তাদের পক্ষে ছিল না সাইফের। দ্বিতীয়ার্ধে আর কোনো গোলের দেখা পায়নি কোনো দলই। তাই শিরোপা থেকে বঞ্চিত হলো ২০১৭ সাল থেকে খেলতে আসা ক্লাব সাইফ স্পোর্টিং।
২০১৭ সালে প্রথম আসরে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেন সাইফ। পরের দুই আসর অর্থাৎ ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়ে থামে সাইফের যাত্রা। ২০২০-২১ মৌসুমে এসে নিজেদের ইতিহাসে সেরা সাফল্যের মুখ দেখেন সাইফ।
এদিকে টানা তৃতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। ফেডারেশন কাপে সাইফের যাত্রা শুরুর পরের বছরই নাম লেখায় বসুন্ধরা কিংস। প্রথম আসরেই ফাইনালে উঠে যায় দলটি। কিন্তু ফাইনালে আবাহনী লিমিটেডের মতো অভিজ্ঞ দলের কাছে শিরোপার মঞ্চে ৩-১ গোলে হেরে রানার্সআপে সন্তুষ্ট থাকে বসুন্ধরা। তবে শিরোপার স্বাদ নিতে সময় লাগেনি তাদের। পরের আসরে অর্থাৎ ২০১৯ সালেই ফেডারেশন কাপের শিরোপা ঘরে তোলে। ফাইনালে সেবার পুরান ঢাকার ক্লাব রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটিকে ২-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জেতে বসুন্ধরা কিংস।