উত্তরে জেঁকে বসেছে শীত, কুয়াশার আড়ালে সূর্য
অগ্রহায়ণের শেষ সপ্তাহে এসে রাজধানীসহ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ঢেকে থাকছে কুয়াশার চাদরে। গত দুই দিন ঢাকার আকাশে সূর্য দেখা যায়নি। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের দাপট বেড়েছে। কোথাও টুপটাপ বৃষ্টিও হচ্ছে। শীতে স্বাভাবিক কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন দিন এনে দিন খাওয়া কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষ। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, কুয়াশা তিন-চার দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ শামসুদ্দিন আহমদ জানান, এবার পঞ্জিকার যেন পাতা ধরেই শীতের আবহ এসেছে প্রকৃতিতে। অনেক জায়গায় ঘন কুয়াশার দাপট থাকছে ভোর থেকে দুপুর অবধি। উত্তরে হাওয়ায় শীতও জেঁকে বসছে ধীরে ধীরে। গতকাল বুধবার কুড়িগ্রামের রাজারহাটে দেশের সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ এ কে নাজমুল হক বলেন, রংপুর, খুলনা, চট্টগ্রামের কিছু এলাকা ছাড়া সর্বত্র কুয়াশার চাদর। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। উত্তরে হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এদিকে গতকাল বুধবার ময়মনসিংহ বিভাগে ১৭, চট্টগ্রামে ১৭ দশমিক ৫, সিলেটে ১৫ দশমিক ৮, রাজশাহীতে ১৬ দশমিক ১, রংপুরে ১৬, খুলনায় ১৮ দশমিক ৪ এবং বরিশালে সর্বনিম্ন ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
হাড় কাঁপানো শীত শুরু হয়েছে উত্তরাঞ্চলে। এছাড়া দেশের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলেও শুরু হয়েছে শীতের দাপট। উত্তরের বাতাসের সঙ্গে সারা দেশেই শুরু হয়েছে মাঝারি কুয়াশা। প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর।
কালিহাতী (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, মঙ্গলবার রাত থেকে ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে পৌলি ব্রিজ পর্যন্ত দীর্ঘ ১২ কিলোমিটার রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে বেশ কিছু সময়ের জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে সাময়িকভাবে যান চলাচল বন্ধ থাকার পর আবারও যান চলাচল শুরু হয়েছে। যান চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়ে অসংখ্য মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কিছুটা কাটলেও যান চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। এখনো থেমে থেমে চলছে যানবাহন।
কামারখন্দ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, সেতুর ওপর যানবাহন তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে যানবাহনের দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার পর কুয়াশা কিছুটা কমে গেলে সেতুর ওপর দিয়ে ফের যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গত কয়েক দিন ধরে সিরাজগঞ্জে কুয়াশার দাপট বেড়েছে। গত তিন দিন সিরাজগঞ্জে সূর্যের দেখাই মেলেনি। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে মাঠঘাট। রাতভর বৃষ্টির মতো ঝরছে শিশির। দুপুরের দিকে কুয়াশা ভেদ করে সূর্য উঁকি দিলেও তা ক্ষণস্থায়ী; তাতেও নেই উত্তাপ। কুয়াশার সঙ্গে হালকা বাতাস যোগ হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে চলনবিল ও যমুনাপাড়ের অসহায় মানুষ। শীতের হাত থেকে বাঁচতে ফুটপাতের গরম কাপড়ের দোকানে ভিড় বেড়েছে। শীতের দাপট থেকে বাঁচতে অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছে। শীতের হাত থেকে রক্ষার জন্য সরকারি কোনো সহায়তা বা কম্বল বিতরণের খবর পাওয়া যায়নি।
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, চলতি মৌসুমে শীত পড়তে শুরু করেছে মৌলভীবাজারের চা-বাগান ও বনাঞ্চল অধ্যুষিত কমলগঞ্জে। এতে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে আসছে। চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন এলাকায় ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ সর্দি, কাশি, জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। হাটবাজারে ও ফুটপাতে গরম কাপড় কিনতে মানুষ ভিড় করছে। বুধবার দিনভর সূর্যের আলো দেখা যায়নি। ফলে বনাঞ্চল ও চা-বাগান এলাকা সমৃদ্ধ থাকার কারণে ঠাণ্ডা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে কাজকর্মে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কমেছে দিনমজুরদের আয়-রোজগার। হাসপাতাল ও প্রাইভেট চিকিৎসাকেন্দ্রে রোগীর ভিড় বাড়ছে। শিশু ও বয়স্ক লোকদের মধ্যে এসব রোগ বেশি দেখা যাচ্ছে।
তিতাস (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, ঘন কুয়াশার আস্তরণে ঢাকা পড়েছে কুমিল্লার তিতাস। বুধবার দিন গড়িয়ে শেষ বিকালেও সূর্যের দেখা মেলেনি। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রা। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকে হাসপাতালে ভিড় করছে। উপজেলার মজিদপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. ইমদাদুল হক শুভ বলেন, বৃদ্ধ ও শিশুরা ঠাণ্ডা, কাশি ও হালকা জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। এটা মূলত মৌসুমভিত্তিক ঠাণ্ডার প্রকোপে হচ্ছে। এতে ভয়ের কিছু নেই।