কলুর বলদের কাজ করছেন স্বামী-স্ত্রী
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে কাঠের ঘানিতে সরিষা মাড়াই করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী রাবিয়া খাতুন। সামর্থ্য না থাকায় কলুর বলদের কাজ তারা নিজেরাই করে থাকেন। জাকির হোসেন উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়নের মাদারজানি গ্রামের মৃত কাজেম আলীর ছেলে।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে তবুও তারা ঘানি টানছেন। কাঠের বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি যন্ত্রটি একজনের কাঁধে, আরেকজন ধাক্কা দিচ্ছেন। এভাবে ঘানির চারদিকে নির্বিকারভাবে অনবরত ঘুরে চলেছেন। আর সরিষা থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় নিংড়ানো খাঁটি তেল জমা হচ্ছে পাতিলে।
ভুক্তভোগী জাকির হোসেন (৬৮) বলেন, ‘এ কাজের সঙ্গে তিন যুগেরও অধিক সময় ধরে জড়িত। একটি গরুর অভাবে স্ত্রী রাবিয়াকে সঙ্গে নিয়ে কলুর বলদের কাজ করে চলেছেন। তিনি আরোও বলেন, সারাদিন ঘানি টেনে ১০ কেজি সরিষার ৩ কেজির মতো তেল পাওয়া যায়। সেই তেল গ্রাম-গঞ্জে বিক্রি করে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা রোজগার হয়। তা দিয়েই কোনরকমে সংসার চলে।’
ভুক্তভোগী রাবিয়া খাতুন (৫২) বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই তিনি কাঠের ঘানি টানছেন। কাজটি কঠোর পরিশ্রমের ও খুবই কষ্টের। আজ অবদি তাদের খোঁজ কেউ নেয়নি।’
জাকির হোসেনের মেয়ে খুশি পারভিন (১৩) বলেন, ‘কাঠের ঘানি দিয়ে সরিষা মাড়াই করতে ৬/৭ টি পাথর ব্যবহার করতে হয়। যার ওজন কমপক্ষে ৬ মণ। বাবা-মা’কে সহযোগিতা করার যথেষ্ট ইচ্ছে থাকলেও এত কঠিন কাজ করার শক্তিই তার শরীরে নাই।’
এদিকে খাদিজা খাতুন নামে জাকির হোসেনের এক নিকটতম প্রতিবেশী বলেন, ‘প্রথম কেউ কাঠের ঘানি টানা মানুষ দু’জনের খোঁজ-খবর নিতে এসেছেন। তাদের এ কষ্ট মেনে নেওয়া যায়না। আপনারা একটা বলদ গরুর ব্যবস্থা করে দিন।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাক্ষ মনিরুজ্জামান মনি বলেন, ‘তাদের সহায়তা দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে।’
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাউল করিম বলেন, ‘কোনোভাবে তাদের অবশ্যই সহযোগিতা দেওয়া হবে।’